পালক সন্তান ঔরষজাত সন্তান সেজে সম্পদ গ্রাসের সুদূর প্রসারী ফন্দী সিআইডিতে তদন্তাধীন


আঃ রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরশহরের ঘাটান্দিতে এক পালক সন্তান ঔরষজাত সন্তান সেজে পালক বাবার সম্পদ গ্রাসের সুদূর প্রসারী ফন্দি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিনব কায়দায় সম্পদ লাভের এ ফন্দি নিয়ে ভূঞাপুরের সর্বত্র আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে সম্পত্তির লোভে মেয়েটি জন্মদাতা পিতা ও গর্ভধারীনি মাকে অস্বীকার করছে।
জানা যায়, জেলার গোপালপুর উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের হায়দার আলী খানের কোন সন্তানাদী না হওয়ায় ঘাটাইল উপজেলার ছয়আনি বকশিয়া গ্রামের নূরুল ইসলামের ঔরষজাতক এবং তার স্ত্রী শেফালী বেগমের গর্ভজাতক ১০-১২ বছরের সন্তান তানিয়া সুলতানাকে পৌষ্য গ্রহন করেন। তাকে লালন পালন করে উপযুক্ত পাত্রে পাত্রস্থ করেন। জামাতা সহ হায়দার আলীর ভূঞাপুর পৌরশহরের ঘাটান্দিতে নিজ গৃহে বসবাস করা অবস্থায় গত ১৫ নভেম্বর ২০২২ ইং তারিখ ঢাকাস্থ শেরে বাংলা নগর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউশন অফ নিউরো সাইয়েন্স এন্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হায়দার আলী খান মৃত্যুবরণ করেন। হায়দার আলী খানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি গ্রাস করার সুদূর প্রসারী নীলনকশার অংশ হিসেবে তানিয়া সুলতানা সত্য গোপন করে জন্মসনদ, স্কুল সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয় পত্র ও নিকাহ নামায় পিতার নাম হায়দার আলী খান ও মাতার নাম মাজেদা বেগম ব্যবহার করেছেন। হায়দার আলী খানের মৃত্যুর পর তার স্থাবর- অস্থাবর সকল সম্পত্তি বুঝে পেতে তানিয়া সুলতানা ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়রের নিকট থেকে ওয়ারিশান সনদ গ্রহন করেন। ওয়ারিশান সনদ মূলে তানিয়া সুলতানা ও তার পালক মাতা সাজেদা বেগম নিজেদের নামে হায়দার আলী খানের রেখে যাওয়া সম্পত্তি নামজারি করেন। তানিয়ার স্বামী আব্দুল বাবী মিয়াকে আমমোক্তার নামা দলিল সম্পাদন করে দেয়। আব্দুল বাবী মিয়া পাওয়ার অব এটর্নি দলিল মূলে সমস্ত সম্পত্তি বিক্রির প্রস্তুতি নেয়। ঘাটান্দি গ্রামের মৃত নছর আলীর ছেলে আব্দুল বাবী মিয়া রেজিস্ট্রারির জন্য একটি দলিল ভূঞাপুর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে দাখিল করেন। সাব-রেজিষ্টার রঞ্জনা রাণী দেবনাথ নানা জটিলতা দেখিয়ে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে ৭ লক্ষ টাকায় দলিল রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে ৭ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন বাবী মিয়া। পরবর্তীতে চুক্তি মোতাবেক কাজ না হওয়ায় ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে আব্দুল বাবী মিয়া অ্যাডভোকেট ভেলায়েত হোসেন খান কাপাশ স্বাক্ষরিত একটি উকিল নোটিশ ভূঞাপুর সাব-রেজিষ্ট্রার রঞ্জনা রানী দেবনাথকে দেন। এতে প্রমানিত হয় জালিয়াতির মাধ্যমে আব্দুল বাবী মিয়া পাওয়ার অফ এটোর্নি পেয়েছেন।
গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত ১ ওয়ারিশান সনদ পত্রে দেখা যায় হায়দার আলী খানের প্রকৃত ওয়ারিশান হচ্ছেন মাজেদা বেগম স্ত্রী, ফেরদৌস হোসেন খান, মোশারফ হোসেন খান ও আনোয়ার হোসেন খান ভাই, রোকেয়া খাতুন ও নুরজাহান খানম বোন ।
ইতি মধ্যে হায়দার আলী খানের সম্পত্তি উদ্ধারে আদালতে মামলা করেছেন ফেরদৌস হোসেন খান ও মোশারফ হোসেন খান এছাড়া ১৪৩৭, ১৪৬০, ১৪৬১, (২০২২-২০২৩) নম্বর জমা খারিজ বাতিলের জন্য সহকারি কমিশনার (ভূমি)ভূঞাপুর বরাবর আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে ফেরদৌস হোসেন খান বলেন আমাদের সম্পত্তি গ্রাস করার প্রয়াস চালিয়েছে আমার ভাইয়ের পালক কন্যা তানিয়া সুলাতানা। দ্রুত কিভাবে পুরো জমি বিক্রি করে দেওয়া যায় সে জন্য প্রভাবশালীদের নানা ভাবে হাত করার চেষ্ঠা করছেন। আমরা তানিয়া সুলতানার পিতৃ পরিচয় ও গর্ভধারীনি মাতার পরিচয় উদ্বঘাটনে ডিএনএ পরিক্ষার জন্য আদালতে মামলা করেছি। মামলার রায় অবশ্যই আমাদের অনুকুলে আসেব। সিআইডিতে তদন্তাধীন মামলাটির অগ্রগতির জন্য সিভিল সার্জন কার্যলয় টাঙ্গাইলের মাধ্যমে একজন ডাক্তার নিযুক্ত করে আলামত সংরক্ষণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে তানিয়া সুলতানা, মাজেদা বেগম ও আব্দুল বারী মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সবাই জানে পালক কন্যা ঔরষজাত কন্যা সেজে সম্পদ গ্রাস করার ঘটনাটি।
এবিষয়ে সিআইডি টাঙ্গাইলে দায়িত্ব প্রাপ্ত এসআই (নিঃ) মোঃ শরীফ উদ্দিন ভুইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তানিয়া সুলতানার পিতৃ পরিচয় সংক্রান্ত ডিএনএ রিপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।