আটোয়ারী (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা:কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে টুং ট্যাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর কামার পল্লী। আর কায়েক দিন পরই কোরবানীর ঈদ। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে উপজেলার প্রধান বানিজ্য কেন্দ্র ফকিরগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের কামার পল্লীতে ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৪০ জন কামার শিল্পী পশু কোরবানীর সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলারও সময় নেই তাদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
পশু কোরবানীর প্রধান হাতিয়ার দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুরি। তাইতো ফকিরগঞ্জ বাজারের কামার পল্লীতে চলছে হাঁপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। আগুনের তাপে লাল হয়ে উঠছে দা, বঁটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। উপজেলা বোধগাও গ্রামের আতি লাল কর্মকারের পুত্র সুরেন কর্মকার তার সহযোগী দিয়ে পেটাচ্ছেন লোহা দিয়ে লোহাকে। কেউ আবার মোটরচালিত মেশিনে দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতি শান দেওয়ার কাজেও ব্যস্ত। চারপাশে শুধু হাতুড়ির টুং ট্যাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা কামার পল্লী। যেন তাদের দম ফেলার ফুসরত নেই। চোখে-মুখে ক্লান্তি, তবুও থেমে নেই লাল তীব্র আগুনের ঝাঁজের ঘামে ভেজা ক্লান্তিহীন শরীর। ফকিরগঞ্জ বাজারের অনন্ত কর্মকার জানান, বছরের অন্য সময় অলসভাবে সময় কাটালেও এখন কাজের চাপ বহুগুণ বেড়েছে। বাড়তি আয়ের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছেন তারা। তাদের এ ব্যস্ততা চলবে কোরবানী ঈদের দিন পর্যন্ত। জানা যায়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে উপজেলার ফকিরগঞ্জ বাজার, মির্জাপুর বাজার, তোড়িয়া বাজার, পাল্টাপাড়া বাজার সহ বিভিন্ন হাট-বাজারে কেনা-বেচা চলছে পশু জবাই ও মাংস কাটার সরঞ্জাম। এসবের চাহিদা পূরণে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কামারের দোকানগুলোয় চোখে পড়ার মতো ব্যস্ততা বেড়েছে।
ফকিরগঞ্জ বাজারের কামার শিল্পী দিপেন কর্মকার জানান, আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদ সামনে রেখে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সুরেন কর্মকার জানান, কয়লা ও লোহার দাম অনেক বেশি। তাই তৈরি করা সরঞ্জাম বেচাকেনা বাড়লেও লাভ কম। কিন্তু বাপ-দাদার এই পেশা ছাড়তে পারছিনা।
বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় বড় ব্যবসায়ীগণ কামারদের কাছে পাইকারী দামে লোহার তৈরী দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত এসব জিনিসপত্র ক্রয় করে দোকানে মজুত রেখে খুচরা বিক্রি করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। এসকল হাট-বাজারে প্রকার ভেদে চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৮০ থেকে ১শ টাকা, দা দেড় শ থেকে আড়াই শ টাকা, বটি ২ শ থেকে ৩ শ, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩শ থেকে ৮শ, চাপাতি ৩শ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যাদববাটি গ্রামের ঝনেক ক্রেতা নাজিরুল মাষ্টার জানান, কোরবানী ঈদের মৌসুমে পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য নতুন ছুরি, বটি, চাপাতি ক্রয় করতেই হয়। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি। তারপরও প্রতি বছর একটা করে নতুন ছুরি, বটি বা চাপাতি না কিনলে মনে তৃপ্তি আসেনা। দাম যতই হোক কুরবানীর জন্য এসব কিনতেই হবে।