আমিরুল ইসলাম অল্ডাম মেহেরপুর প্রতিনিধি:স্বৈরাচার হাসিনা সরকার পতনের পর তার অনুগত মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের (ডিজিএম) বিজয় চন্দ্রকুন্ডু যোগদান করার পর থেকে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অফিস পরিচালনা করছেন।
জোনাল অফিসে জুলাই ওআগস্ট মাসে আবাসিক বিদ্যুৎ বিল ডাবল প্রস্তত করে,১ মাসে গ্রাহকের ৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ উঠেছে,ডিজিএম বিজয় চন্দ্রকুন্ডুর বিরুদ্ধে।
অফিস সুত্রে জানা গেছে গাংনী উপজেলায় প্রায় এক লক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে, এর মধ্যে গাংনী জোনাল অফিসের আওতায় ৪২ হাজার গ্রাহক,ও বামুন্দি এরিয়া অফিসে ৪৫ হাজার গ্রাহক।
এসকল গ্রাহকের নিকট থেকে ১ মাসে অতিরিক্ত বিল আদায় করা হচ্ছে ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। এ সকল টাকা, ডিজিএম এর ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মিটার রিডার ও বিল প্রস্তুতকারী বিলিং এ্যাসিস্টেন্টদের বিরুদ্ধে ভূঁতুড়ে বিল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই তিনি এসব অপকর্ম করছেন।
উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ঝোড়পাড়া গ্রামের গ্রাহক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমার মিটার নং ৮৫২৪৪, দী়ঘদিন ধরে প্রতিমাসে ৩ শত টাকা, থেকে ৪ শত টাকার উপরে বিল আসেনা।
সেখানে জুলাই মাসের ৪ শত টাকার জায়গায় ৩৬০০ টাকা এসেছে। আমার মত এলাকার সকল মিটারের বিদ্যুৎ বিল ডাবল প্রস্তুত করে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এই সকল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকার অধিকাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ সম্পর্কে অবগত না। অফিস থেকে যে বিল করে দেয়া হয় সেটাই তারা পরিশোধ করে।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার, সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল খালেক জানান, আমার গ্রামের প্রায় ১০০ জন গ্রাহক এসে অভিযোগ করেন গত জুলাই মাসের তুলনায়, আগস্ট মাসে ডাবল বিল প্রস্তুত করেছে।
১ হাজার টাকা জায়গায় ৭ হাজার টাকা,, ৭০০ টাকার পরিবর্তে ১৬০০ টাকা এসেছে, এভাবে সকল গ্রাহকের একই অবস্থা।
আগস্ট মাসের বিল নেওয়া বন্ধ রেখে ,ঘটনাটি তদন্তপূর্বক পরে বিল নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য,আবাসিক মিটার ব্যবহারকারীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের বিল ১ হাজার ৩৬ টাকা, জুলাই মাসের বিল ১ হাজার ২ শ ৭৬ টাকা হলেও বর্তমান আগষ্ট মাসের ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল এসেছে ৩০ হাজার ৬৮৪ টাকা। যাহা দৃশ্যতঃ প্রস্তুতকৃত বিলে চরম গরমিল লক্ষ্য করা গেছে।
ভূঁতুড়ে বিলের এমন ঘটনাটি ঘটেছে, গাংনী উপজেলার রায়পুর ইউপির অন্তর্গত রায়পুর গ্রামে। মিটার ব্যবহাকারীর নাম অর্থ্যাৎ গ্রাহক রায়পুর গ্রামের শ্রী মদু দাসের ছেলে শ্রী সন্নাসী দাস।
যার মিটার নং-০০১০৩৮৩০। সন্নাসী দাস জানান, আমি একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অসহায় বাসিন্দা। আমি দীর্ঘদিন যাবত গাংনী জোনাল অফিসের আওতায় বিদ্যুত ব্যবহার করে আসছি।
বিগত বছর এবং মাসে কখনও ভৌতিক বিল আসেনি। প্রতি মাসেই গড়ে ৫ শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা করে বিল করা হয়ে থাকে।চলতি আগষ্ট মাসে ৩০ হাজার বেশী টাকা বিল দেখে আমি হতবাক।
তিনি স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে গাংনী পল্লী বিদ্যূত অফিসের ডিজিএম কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেছেন,মিটারের রিডিং অনুপাতে বিল ঠিক আছে।
আপনি একবারে দিতে না পারলে মাসে মাসে দিয়ে পরিশোধ করবেন।
বিষয়টির সুরাহা করতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন। এরকম ভুতুড়ে বিলের অভিযোগে অসংখ্য গ্রাহকের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এব্যাপারে বিদ্যুত অফিসের ডিজিএম বিজয় চন্দ্রকুন্ডুর নিকট অতিরিক্ত বিল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি, বলেন, আমার অফিসের মিটার বিল রিডিং করার সময় আমাদের স্টাফদের ভুল হতে পারে। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। ইতিমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে,
অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,একবারে না দিতে পারলে প্রতি মাসে এটা পরিশোধ করবে। পরের মাসে ঠিক হয়ে যাবে। এঘটনা নিয়ে নিউজটা না করার অনুরোধ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, এমন ঘটনায় আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। যদি কোন গ্রাহক অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম, বলেন,অতিরিক্ত বিল প্রস্তুত করার বিষয়ে গ্রাহকরা লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা সেটার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।