আমিরুল ইসলাম অল্ডাম মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি : গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের উপর দৃর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিচারিক কাজে বাঁধা প্রদান করায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রমাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে। আজ সোমবার দুপুর ১২টার সময় গাংনী উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, শিক্ষা অফিসের দাপ্তরিক কার্যক্রম ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের আদালতে দায়েরকৃত মামলার অধিকতর অনুসন্ধান, প্রতিবেদন ও সুষ্ঠু সমাধান করার লক্ষ্যে সালিস মিমাংসা করতে আদালতের পক্ষ থেকে আদেশ প্রদান করা হয়। সেই লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের প্রায় সকল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। জানা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল , মেহেরপুরের জেলা ও দায়রা জজ (বিচারক) মো. তহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পিটিশন নং-১০৮/২০২৪ মামলার নিস্পত্তি করতে আদেশ দেয়া হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ,২০০০ এর ২৭ (১ক)(ক)ধারা অনুযায়ী এই আদেশ ৭ কর্মদিবসের মধ্যে একটি লিখিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন এবং উক্ত প্রতিবেদনের সমর্থনে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহনের কাগজ পত্র সহ প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রমান দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়।
পারিবারিক আদালতে সালিস মিমাংসা করতে সে মোতাবেক আজ সোমবার বাদী ও বিবাদীদের শুনানীতে আহবান করা হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক যথারীতি মামলার বাদী সীমা খাতুন ও বিবাদী তুহিন আলীকে নিয়ে উভয়পক্ষের স্বাক্ষীদের নিয়ে শুনানী করছিলেন। এমতাবস্থায় একদল দুর্বৃত্ত শিক্ষা অফিসে এসে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি শুরু করে এবং বিবাদীপক্ষের লোকজনের উপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে তাদেরকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। বাইরে হট্টগোল ও গালিগালাজ শুনতে পেয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক অফিসের কলাপসেবুল গেটের সামনে আসলে একদল উচ্ছৃঙ্খল দুর্বৃত্ত অফিসারের উপর চড়াও হয় এবং তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে গেলে তিনি বাঁধা দেন। এসময় শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক কে নানাভাবে অশ্রাব্যভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে তার শার্টের কলার ধরে টানাহেচড়া করে লাঞ্ছিত করে।
খবর পেয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা তাড়াতাড়ি ঘটনাস্থলে যান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরবর্তীতে ঘটনার বিবরণ জানতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারকের অফিস কক্ষে আলোচনায় বসেন। এসময় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক কান্না জড়িত কন্ঠে ঘটনার বর্ণনা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমি একজন কর্মকর্তা,আমার অফিসে বসে দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার শুনানী করছি। আমাকে যদি বহিরাগত দুবৃর্ত্তরা অপমান কওে, লাঞ্ছিত করে তাহলে আমি কিভাবে কাজ করবো। এসময় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা যেমন আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তাসহ একাধিক কর্মকর্তারাও বলেন আমরা এমন পরিস্থিতি হলে আদালতের প্রেরিত কোন সালিস ,তথ্য প্রমান,অনুস ন্ধান রিপোর্ট দিতে পারবো না। শিক্ষা অফিসারের অভিযোগ শোনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা প্রথমত জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করেন। পরবর্তীতে ঘটনার সাথে জড়িত দুবৃর্ত্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কঠোর ভুমিকা রাখেন। তিনি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুর্বৃত্তদের সনাক্ত করা হচ্ছে। তিনি তাৎক্ষনিকভাবে গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল,মেহেরপুরের দায়িত্ব প্রাপ্ত সেনাবাহিনীদল, র্যাব-১২ এর ক্যাম্প ইনচার্জ আশরাফুল্লাহকে বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আটক এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গাংনী উপজেলার হাড়িয়াদহ গ্রামের নের সোহরাব আলীর মেয়ে সীমা খাতুনের সাথে একই উপজেলার ঝোরপাড়া গ্রামের মখলেছুর রহমানের ছেলে তুহিন আলীর প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে ১ বছর আগে নিকাহ রেজিষ্টারের কার্যালয়ে বিয়ে হয়। পরবর্তীতে পারিবারিক ভাবে ভুল বুঝাবুঝি হলে ছেলে তুহিন আলী বিয়ে অস্বীকার করে স্ত্রী সীমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এনিয়ে সীমা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ইতোপূর্বে গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তি করতে তিনি স্বামী তুহিনের ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু স্ত্রী বাদি সীমা খাতুন নারাজি দিয়ে আদালত অবমাননা করে চলে যায়। পরবর্তীতে উক্ত মামলা পুনঃ প্রতিবেদন করে নিস্পত্তি করতে উপজেলা মাধ্যীমক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সেই আলোকে তিনি উভয়পক্ষের শুনানী করছিলেন।