ঢাকাTuesday , 27 May 2025
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. খেলাধুল
  4. জাতীয়
  5. বিনোদন
  6. বিশ্ব
  7. রাজনীতি
  8. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না বালিগ্রাম ভূমি অফিসে?

Mahamudul Hasan Babu
May 27, 2025 8:45 am
Link Copied!

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর প্রতিনিধি:জমির নামজারি, কাগজপত্র দেখিয়ে দেয়া, কোন তথ্য নেয়া ও খাজনা আদায়ে নেয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। এছাড়া জমি সংক্রান্ত কোন তদন্ত আসলে টাকা ছাড়া নেয়া যায় না রিপোর্ট। টাকা না দিলে বিপক্ষে চলে যায় রিপোর্ট। কোন তদন্তের বিষয় দুই পক্ষই যদি যোগাযোগ করে তাহলেতো কোন কথাই নেই। দুই পক্ষের কাছ থেকে নেয়া হয় টাকা। যে পক্ষ বেশী টাকা দেয় তার পক্ষেই যায় রিপোর্ট। নিজ হাতেই করেন লেনদেন। এছাড়া অফিস স্টাফ, স্থানীয় কিছু দালাল আছে তার সহযোগী হিসেবে। টাকা ছাড়া কোন কাজই যেন করতে পারেন না এই কর্মকর্তা। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টাকা দিয়েই তিনি এসব করেন বলে এলাকায় গুঞ্জন আছে। বলছিলাম মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ভূমি অফিসের তহসিলদার কবির মিয়ার কথা। এই ভূমি অফিসে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না তা আশেপাশে দোকানদারসহ স্থানীয় ও সেবা নিতে আসা সবাই জানে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ দিলেও লিখিত অভিযোগ না পাওয়ার দোহাই দিয়ে তহসিলদার কবির মিয়ার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেননি তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভূমি অফিসেও লোকজনের ভীড়। ভূমি অফিসের সামনে দুটি কম্পিউটারের দোকান। এই দোকান থেকে অন-লাইনে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন আবেদন করছে ভূমি অফিসের সেবা গ্রহণকারীরা। এই দুই দোকান মালিকসহ অফিসের কর্মচারীরা দালাল হিসাবে কাজ করে বলেও অভিযোগ আছে। এই দুই দোকানের মালিকদের মধ্যে রফিক তহসিলদার কবির মিয়ার গ্রামের বাড়ির কাছে বাড়ি। তাকে সেখান থেকে এই দালালী করার জন্য তহসিলদার নিজেই নিয়ে আসে এই ভূমি অফিসে।
আসে পাশের বিভিন্ন দোকানদারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এই অফিসে যে কোন কাজ করতে আসলে টাকা দিয়ে কাজ করাতে হয়। যে কাজগুলো চুক্তিতে হয় সেগুলোর টাকা একত্রে তহসিলদারের কাছে দিলেই কাজ হয়ে যায়। আর যদি কেউ চুক্তি না করে তাহলে তাকে ধাপে ধাপে টাকা দিতে হয়। একটি নামজারিতে চুক্তি করলে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা লাগে। এটা কোন কোন ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এছাড়া কোন তথ্য জানতে গেলে বা কাগজ দেখতে গেলে ২শ থেকে ৫ শত টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। তদন্তের কাজ আসলে বাদী বিবাদী দুজনের কাছ থেকেই টাকা নেয় তহসিলদার। যে বেশী টাকা দেয় তার পক্ষে যায় তদন্ত রিপোর্ট। তদন্তের ক্ষেত্রে চুক্তি করলে তা ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকার উপরেও চলে যায়। এটা নির্ভর করে তদন্তের ধরণ এবং সম্পদের মূল্যের উপর। আর কেউ যদি চুক্তি না করে তাহলে তাকে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। এছাড়া ধাপে ধাপে টাকা দিতে হয়। এভাবেই প্রতিনিয়ত ভূমি সেবা গ্রহণকারীদের একদিকে হয়রানী করা হয় অন্যদিকে হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমান টাকা। আসেপাশে দোকানদার থেকে শুরু করে স্থানীয় ও সেবাগ্রহনকারীরা সবাই জানে এই তহসিলদারকে টাকা না দিয়ে কাজ করা যায় না। এমনকি এই টাকা উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিতে হয় বলেও গুঞ্জন আছে।
লাল মিয়া হাওলাদার নামের এক প্রতিবন্ধি বয়স্ক মানুষ তার জমির নামজারি করতে আসেন। তার কাছ থেকে দাবি করা হয় ৫ হাজার টাকা। সে কোন মতে ৪ হাজার টাকা তহসিলদারের হতে তুলে দেয়। এতে সে রাজি না হলে পরে দিবে বলে ভূমি অফিস থেকে বের হয়। বিষয়টি আমার সংবাদ প্রতিনিধি জানতে পেরে সেই বয়স্ক প্রতিবন্ধীকে নিয়ে তহসিলদার কবির মিয়াকে টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করে। পরে প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বৃদ্ধকে টাকা ফেরত দিয়ে কাজটি করে দেয়ার কথা বলেন।
প্রতিবন্ধি বৃদ্ধ লাল মিয়া হাওলাদার বলেন, আমি গরিব মানুষ। অনেক কষ্টে এই ৪ হাজার টাকা জোগার করে এনেছিলাম। তাতে সে রাজি হয় নি। আমি চার হাজার টাকা তাকে দিয়ে পরে ১ হাজার টাকা দেব বলে আসি। আপনারা ছিলেন তাই আমার কষ্টের টাকা ফেরত পেলাম। এখন কাজটা ভালভাবে হলেই হয়।
টাকা নেয়ার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে এরকম অর্থের লেনদেন সব ভূমি অফিসেই হয় বলে মন্তব্য করে তহসিলদার। এছাড়া উপজেলা অফিসসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেন এসব করা হয়। এটা সবাই জানে। আপনারা লিতে আর কি করবেন। তারচেয়ে আপনাদের মিষ্টি খেতে কিছু দিয়ে দেই তা নিয়ে আপনারা চলে যান। এ বিষয়ে আমি কোন বক্তব্য দিব না।
ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ-উল-আরেফিন বলেন, আমি তার বিরুদ্ধে মৌখিক দু’একটা অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত কোন অভিযোগ পেলে বা কোন প্রমান পেলে আমি তা বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।